পল্লী বিদ্যুৎকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তরের চেষ্টায় বিশ্বব্যাংকের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে সরকার: ক্যাব

News Desk


পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে সরকার অগ্রসর হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব। সংগঠনটি বলছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সেবামূলক খাত থেকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তর করতে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে এবং এতে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে।

আজ ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে কোম্পানিতে পরিণত করার চেষ্টা মূলত বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পরামর্শ অনুযায়ী হচ্ছে এবং সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পিবিএস)–এর মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই বিবাদ নিরসনের পরিবর্তে সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ আরইবি ও পিবিএস একীভূত করার জন্য ক্যাবসহ একাধিক পক্ষের সুপারিশ দেওয়া হলেও তা গুরুত্ব পাচ্ছে না।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা টানা ১৫ দিন শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তারা সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন, যার মধ্যে রয়েছে আরইবি ও পিবিএস একীভূতকরণ। রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি।

বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হলেও তা কার্যকর ফল দেয়নি। পরবর্তীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। সম্প্রতি তারা একটি খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে আরইবিকে কোম্পানিতে রূপান্তরের সুপারিশ করা হয়। তবে এই প্রতিবেদনে ক্যাবের মতামত নেওয়া হয়নি এবং বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও ক্যাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

ক্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, এই সুপারিশ ত্রুটিপূর্ণ ও স্বার্থ সংঘাতপূর্ণ। সংবাদ সম্মেলনে এম শামসুল আলম বলেন, যদি এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়, তাহলে জনগণকে ‘জ্বলন্ত চুলায়’ ফেলা হবে। ভোক্তারা এখনই চাপে আছে, কোম্পানি হলে তাদের ওপর ব্যয় আরও বাড়বে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, কোম্পানিকরণের মাধ্যমে ভোক্তাদের শোষণের পথ তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ২০০ বছর শাসনের নামে শোষণ করেছে, এখন আবার সেই কৌশলে ফিরে যাওয়া হচ্ছে।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ২০১০ সাল থেকেই পল্লী বিদ্যুৎকে বেসরকারিকরণ করার পরামর্শ দিয়ে আসছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি। তবে আগের সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বর্তমান সরকার সেই অসমাপ্ত এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে। ক্যাবের দাবি, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ বিদ্যুৎ খাত পুরোপুরি বাণিজ্যিক হয়ে উঠবে এবং সাধারণ ভোক্তার ওপর চরম প্রভাব ফেলবে। ক্যাব এর তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, এই নীতি গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা কখনো সফল হতে দেওয়া যাবে না।

Footer Section