২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আজ উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বেলা ৩টায় সংসদে তাঁর হাতে উন্মোচিত হবে এই বাজেট। তবে তার আগেই এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছে। এসব তথ্য সামষ্টিক অর্থনীতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে সহায়তা করে এবং আগত বাজেটের প্রেক্ষাপট বুঝতে সুবিধা হয়।

চলতি বছর বাংলাদেশের অর্থনীতির মোট প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা হয়েছে আনুমানিক ৫.৮ শতাংশে। যদিও এটি আগের বছরের ৬.৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। বিশ্বব্যাপী মন্দা, রপ্তানি হ্রাস, এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা এর কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি বর্তমানে বেশ উদ্বেগজনক। এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত খাদ্য ও গৃহস্থালি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গড় মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯.৩ শতাংশে। সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, যা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
রপ্তানি আয়ের দিক দিয়ে দেখা যাচ্ছে, তৈরি পোশাক খাত এখনও দেশের বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস হলেও ইউরোপ ও আমেরিকায় বাজার সংকোচনের কারণে প্রবৃদ্ধি কিছুটা স্থবির। এপ্রিল পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ কম।
রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা ইতিবাচক। ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৮.১ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ায় নতুন কর্মী প্রেরণের কারণে এ খাতে আশা দেখা দিয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলারে, যা দিয়ে মাত্র ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।
ডলারের বিপরীতে টাকার মানেও অবনমন অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রতি ডলার কিনতে গড়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে, যা আমদানির খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতিও প্রত্যাশিত নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে।
অপরদিকে সরকারি ঋণ ও ঘাটতি মোকাবেলায় অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং খাতে নির্ভরতা বাড়ছে, যার ফলে ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ সংকুচিত হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে আজকের বাজেট থেকে মানুষ প্রত্যাশা করছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ এবং তরুণদের জন্য বাস্তবমুখী কর্মসংস্থান প্রকল্প। বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক খাতগুলোতে বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়েও জনমনে আগ্রহ রয়েছে।
অর্থনীতির এই বাস্তব চিত্রই নির্ধারণ করে দেবে, আগামী বাজেট সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কতটা সক্ষম হবে।