পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেতু-কালভার্ট, যার নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৪১ লাখ টাকা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো—সেতুটির দুই পাশে কোনো সড়কই নেই। এক পাশে সরু আলপথ, অন্য পাশে শুধু আবাদি জমি। এই অবস্থায় এমন একটি সেতু নির্মাণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সেতুটির অবস্থান গোরস্থানের পাশে, হাকিমপুর-দগরবাড়ি থেকে বয়ে আসা একটি শুকনা নালার ওপর। স্থানীয়রা বলছেন, আশপাশে মানুষের চলাচলের রাস্তাই নেই, তাই সেতুটি এখন কোনো কার্যকর উপকারে আসছে না। কেউ কেউ বলছেন, বর্ষাকালে ফসল আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা কাজে লাগলেও সড়ক ছাড়া বাস্তবে এটি অকার্যকর হয়ে থাকবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই জায়গায় সেতু নির্মাণের যৌক্তিকতা স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ এটিকে সম্পূর্ণ অর্থের অপচয় বলেও অভিহিত করেছেন। এক বাসিন্দা বলেন, “পেছনে তো শুধু ফসলের মাঠ। কেউ ব্রিজ দিয়ে নামবে—সেটার সুযোগই নেই। এই টাকা দিয়ে অন্য কোথাও জরুরি রাস্তা মেরামত করলে বেশি উপকার হতো।”
সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৮ মে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এটি বাস্তবায়ন করছে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে মেসার্স তানিয়া কনস্ট্রাকশন। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ লাখ ১৯ হাজার ২২০ টাকা ৯০ পয়সা। নির্মাণকাজের নির্ধারিত মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত, তবে তা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ১১.৫৮ মিটার এবং প্রস্থ ১৪ ফুট। বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, শুধু ওপরের ঢালাই কাজ বাকি। তবে দুটি পাশই নিচু, ফলে সেতুতে ওঠানামাও কঠিন। নির্মাণকাজে সহযোগিতার জন্য পূর্ব পাশে কাঠের একটি অস্থায়ী সিঁড়ি বসানো হয়েছে।
এই সেতু সম্পর্কে জানতে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম শাহর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে একজন অফিস সহকারীর মাধ্যমে জানা গেছে, প্রকল্পটি সরকারি প্ল্যান অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসাইন জানান, “নালার দুই পাশে ৩০ ফুট করে সরকারি জমি রয়েছে, যা বর্তমানে বেদখল। ম্যাপে পশ্চিম পাশে রাস্তা দেখানো আছে, যা ফকিরপাড়া গ্রামে যায়। কয়েক হাজার একর আবাদি জমির সুবিধার কথা মাথায় রেখেই সেতুটি করা হচ্ছে। আমরা চাই সেতু নির্মাণের পর ওই জমিগুলো উদ্ধার করে রাস্তা করা হোক।”
জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, “বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং প্রযোজ্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এখন দেখার বিষয় হলো, রাস্তা ছাড়াই তৈরি হওয়া এই সেতু আদৌ সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসে কি না, নাকি এটি হয়ে থাকবে কাগজে কলমেই ‘উন্নয়নের একটি নমুনা’।