ট্রাম্পের সামনে ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’র অভিযোগে উত্তপ্ত বৈঠক, শান্ত থেকে জবাব দিলেন রামাফোসা

News Desk

ট্রাম্পের সামনে ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’র অভিযোগে উত্তপ্ত বৈঠক, শান্ত থেকে জবাব দিলেন রামাফোসা. Dhakainlight.com

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মধ্যকার এক বৈঠক ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। গতকাল বুধবার (২১ মে ২০২৫) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক শুরু হয়েছিল হাসিমুখে, তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। বৈঠকে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং জমি দখলের অভিযোগ তোলেন—যা দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে বারবার মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে অস্বীকার করা হয়েছে।

ট্রাম্প বৈঠকে একটি ছাপানো পত্রিকার কাটিং তুলে রামাফোসার হাতে দেন এবং শ্বেতাঙ্গদের নিপীড়নের কথিত প্রমাণ দেখাতে ভিডিও চালান। এ সময় আলো নিভিয়ে দেওয়া হয় এবং ভিডিওতে প্রতীকী কিছু সাদা রঙের ক্রস দেখানো হয়, যেগুলোর ব্যাখ্যায় ট্রাম্প বলেন—সেগুলো শ্বেতাঙ্গ নিহতদের সমাধিচিহ্ন। যদিও বাস্তবে সেগুলো ছিল একটি বিক্ষোভে প্রতীকী ব্যবহার।

রামাফোসা এই দাবি শান্তভাবে খণ্ডন করেন। তিনি বলেন, ‘যদি সত্যিই গণহত্যা চলত, তাহলে আমার সফরসঙ্গী এই তিনজন শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান এখানে উপস্থিত থাকতেন না।’ তিনি ওই সময় উপস্থিত কিংবদন্তি গলফার আর্নি এলস, রেটিফ গুসেন এবং বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী জোহান রুপার্টের কথা বলেন।

ট্রাম্প সন্তুষ্ট হননি। তিনি পাল্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের হাজার হাজার প্রতিবেদন, প্রামাণ্যচিত্র ও খবর রয়েছে। আমাদের ব্যবস্থা নিতেই হবে।’

দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ প্রচারণা বহুদিন ধরেই চরম ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে। এই তত্ত্ব ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র, দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া প্রযুক্তিবিদ ইলন মাস্কও সমর্থন করেন। এ বৈঠকে মাস্ক উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে দেশটির জন্য জরুরি মার্কিন সহায়তা বাতিল, শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু আফ্রিকানারদের জন্য মার্কিন আশ্রয়ের ঘোষণা, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার, এবং আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা গণহত্যার মামলা নিয়ে সমালোচনা।

রামাফোসা এসব অভিযোগের মুখেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহ দেখান। উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। তবে বর্তমানে দেশটির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের চাপানো ৩০ শতাংশ শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় সম্প্রতি পাস হওয়া ভূমি সংস্কার আইন নিয়েও ট্রাম্প অভিযোগ করেন। অথচ এই আইন এখনো বাস্তবায়ন পর্যায়ে পৌঁছায়নি এবং এতে জনস্বার্থে অনাবাদি জমি সরকারের দ্বারা অধিগ্রহণযোগ্য হলেও, ক্ষতিগ্রস্তদের আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশের ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে মোট ২৬ হাজার ২৩২টি হত্যাকাণ্ড নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘটনা মাত্র ৪৪টি। নিহতদের মধ্যে মাত্র আটজন কৃষক ছিলেন।

ওভাল অফিসে বৈঠক চলাকালে ট্রাম্প একের পর এক অভিযোগ উত্থাপন করেন, যদিও রামাফোসা বারবার শান্তভাবে তার প্রতিবাদ জানান এবং যুক্তির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান। এই কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে বৈঠক শেষ হয়।

এই বৈঠকটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির ধরন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের বিষয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ‘শ্বেতাঙ্গ নিপীড়ন’ বিষয়ক বক্তব্য আন্তর্জাতিকভাবে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

Leave a Comment

Footer Section