জুনে প্রতিদিন সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন গড়ে ২৩ জন মানুষ

News Desk

জুনে প্রতিদিন সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন গড়ে ২৩ জন মানুষ. Dhakainlight.com

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র আরও একবার স্পষ্ট করে দিলো সদ্যবিদায়ী জুন মাসের পরিসংখ্যান। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জুন মাসে গড়ে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন মানুষ। গত মে মাসের তুলনায় এই সংখ্যাটি ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাসজুড়ে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে মোট ৬৮৯টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৯৬ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৮৬৭ জন। নিহতদের মধ্যে শিশু ছিল ১০৯ জন ও নারী ছিল ১০৪ জন। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়—২২৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২২৮ জন মোটরসাইকেল আরোহী। যা পুরো মৃত্যুর ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং দুর্ঘটনার ৩৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।

এছাড়াও, দুর্ঘটনায় ১২০ পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট প্রাণহানির ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারীদের মধ্যেও নিহত হয়েছেন ১০৬ জন। এসব পরিসংখ্যান দেশের সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে।

সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি নৌ ও রেল দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। জুন মাসে ১৮টি নৌ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২১ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩ জন। অন্যদিকে, রেলপথে ঘটেছে ৫৩টি দুর্ঘটনা, যাতে ৪৪ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কে। ২৯৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ২৪৩টি আঞ্চলিক সড়কে, ৮৭টি শহরের সড়কে এবং ৫৯টি গ্রামীণ সড়কে। বাকি চারটি দুর্ঘটনা হয়েছে অন্যান্য স্থানে।

প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, রাস্তায় নির্মাণ ত্রুটি, বেপরোয়া গতি, চালকদের মানসিক ও শারীরিক অযোগ্যতা, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, অসংগঠিত কর্মঘণ্টা ও পারিশ্রমিক ব্যবস্থা, মহাসড়কে ধীরগতির যান চলাচল, যুবকদের বেপরোয়া বাইক চালানো, ট্রাফিক আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা ও উদাসীনতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সীমিত সক্ষমতা এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজির মতো বিষয়গুলো।

এই বিপর্যয় থেকে উত্তরণে করণীয়ও তুলে ধরেছেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তার মতে, অধিকাংশ দুর্ঘটনাই অতিরিক্ত গতির কারণে ঘটে, যার ফলে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। তিনি বলেন, গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি চালু করা দরকার, চালকদের জন্য চালু করতে হবে মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ, এবং পথচারীদের সচেতন করতে হবে নিয়মিত গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে।

তিনি আরও বলেন, “শুধু আইন করে, বা চালক-পথচারীকে দোষারোপ করে সড়ক নিরাপদ হবে না। প্রত্যেক নাগরিকের সচেতনতা এবং সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া এই মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব নয়।”

একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে শুধু প্রাণহানিই নয়, দেশের অর্থনীতিও বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের ক্ষতি হিসেব করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা দেশের জন্য একটি বিশাল আর্থিক ক্ষতি।

সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে সরকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং জনগণকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্ঘটনাবিহীন নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশায় তাই আবারও প্রশ্ন জাগে—আর কত প্রাণ গেলে আমাদের টনক নড়বে?

Footer Section