জুনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত সর্বোচ্চ, ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার দাবি উঠছে

News Desk

জুনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত সর্বোচ্চ, ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার দাবি উঠছে. Dhakainlight.com

বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের চিত্র আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ হাজার ৩৪৫ জন, আর একমাত্র জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮০৪ জন। যা আগের পাঁচ মাসের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদরা এই পরিস্থিতিকে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট’ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

সর্বশেষ সরকারি তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬৮২ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩ জন। শুধু জুনেই মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের, যা বছরের মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। জুন মাসে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। প্রথম সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল ২০২৩ সালের জুনে—৫ হাজার ৯৫৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এনএস১, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষার সর্বোচ্চ ফি ৫০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে তা ৩০০ টাকা। সিবিসি পরীক্ষার ফি নির্ধারিত হয়েছে ৪০০ টাকা। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এ নিয়ম ৩১ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টি ও অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে এ বছর এডিস মশার প্রজনন বেড়েছে। জুনে ২০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হলেও বাতাসে আর্দ্রতা ৯০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। এসব কারণে মশার বিস্তার বেড়েছে এবং তা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে পরিণত হয়েছে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। বরগুনায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৩৯ জন, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ২৫ শতাংশ। দেশের ৭৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীই রাজধানীর বাইরে। বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কক্সবাজারে সংক্রমণের হার বেশি।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, এবারের সংক্রমণে সেরোটাইপ–৩ এর বিস্তার দেখা যাচ্ছে। নতুন সেরোটাইপের প্রাদুর্ভাব রোগীদের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে, যেমনটি বরগুনায় ঘটছে। সাধারণত সংক্রমণ বেশি হলে রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার বাড়ে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেভাবে দ্রুত অবনতি হচ্ছে, তাতে একে আর হেলাফেলা করা যাবে না। এখনই একে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। সরকারের প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ তিনি অপ্রতুল বলেও উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এলাকা ভিত্তিক সংক্রমণ চিত্র তৈরিতে ম্যাপিং জরুরি, যাতে করে স্থানীয়ভাবে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

এলাকাভিত্তিক সংক্রমণের তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছে আইইডিসিআর। তবে এখনও কার্যকর কোনো ম্যাপিং বা জনসচেতনতা কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। এমনকি আইইডিসিআরের কারিগরি কমিটির সদস্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশারও জানিয়েছেন, তাঁকে এখনো এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখন প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচি, যার মধ্যে থাকবে মশার উৎস ধ্বংস, জনসচেতনতা, জরুরি চিকিৎসা সুবিধা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা গ্রহণ। না হলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর রূপ নিতে পারে, যা ২০২৩ সালের মতো বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Footer Section