নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত ছয় বছর বয়সী শিশু রিয়া গোপের মৃত্যুর এক বছর পর অবশেষে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক আবু রায়হান এই মামলা করেন। এতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
রিয়া গোপ ছিল নয়ামাটি এলাকার দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান। সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করেছিল। পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ হয় ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, যখন শহরের মণ্ডলপাড়া এলাকায় চলমান ছাত্র আন্দোলনের সময় তার মাথায় গুলি লাগে। সেই সময় সে নিজের বাসার পাঁচতলা ছাদে খেলছিল।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ওইদিন বিকেল চারটার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা মণ্ডলপাড়া থেকে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় একটি মিছিল বের করে। সেই মিছিলে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। তাদের হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা। তারা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। ছাদে অবস্থান করা রিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুলাই মারা যায়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকে রিয়ার পরিবারকে মামলা করতে বলা হলেও কেউ রাজি হয়নি। এ কারণে প্রায় এক বছর পর নিজেরা বাদী হয়ে এই মামলা করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “রিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে কোনো মামলা হয়নি। তাই আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুলিশ নিজ উদ্যোগে মামলা করেছে।”
রিয়ার মৃত্যুর দিন একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাবার কোলেই ঢলে পড়ে শিশুটি। রক্তাক্ত অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শহরজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়, সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ ও শোক জানায় নানা মহল।
রিয়ার বাবা দীপক কুমার গোপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এই মামলাটি দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আবারো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশেষ করে একজন শিশুর এভাবে প্রাণ হারানো এবং পরে দীর্ঘদিন কোনো আইনি প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া বিষয়টি সমাজে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
জনগণ এখন অপেক্ষায় রয়েছে—বিচারিক প্রক্রিয়ায় কত দ্রুত অগ্রগতি ঘটে এবং নিহত রিয়ার পরিবার প্রকৃত ন্যায়বিচার পায় কি না।