সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের সাধেরখলা গ্রামে চুরির অভিযোগে ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতাকে রশি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ইছা মিয়া নামের এক যুবককে একটি পাকা খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাঁর হাত-পা বাঁধা এবং চারদিকে উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছে। কেউ চুরি হওয়া মুঠোফোনের সিম ফেরত চাইছেন, আবার কেউ মসজিদ থেকে চুরি হওয়া জিনিসপত্রের খোঁজ করছেন। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইছা মিয়া বলেন, ‘আমার ঘরেও মালটা আছে, আইনা দেই… আমারে আর মাইরো না…।’
জানা গেছে, গত শনিবার রাতে সাধেরখলা হাজী এম এ জাহের উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে রহিম মিয়ার দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে সন্দেহভাজন হিসেবে স্থানীয় লোকজন ইছা মিয়াকে ধরে আনেন এবং দোকানের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। তখন তিনি চুরির কথা স্বীকার করেন এবং কিছু মালামাল ফেরত দেন। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে লিখিত মুচলেকা দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইছা মিয়ার পরিচয় জানতে গিয়ে জানা যায়, তিনি ওই ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তবে সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সাধারণ সম্পাদক মাসুক মিয়া জানান, তিনি ২০২০ সালে পদত্যাগ করেছেন এবং বর্তমান নেতৃত্ব সম্পর্কে অবগত নন।
এলাকার বাসিন্দা নুর আলম জানান, তাঁর বাড়ি থেকেও একাধিকবার চুরি হয়েছে এবং তিনি ইছা মিয়াকে এ বিষয়ে সন্দেহ করেন। তিনি দাবি করেন, এলাকার বহু মানুষ ইছা মিয়ার কারণে অতিষ্ঠ।
দক্ষিণ বড়দল ইউপি সদস্য রোপন মিয়া বলেন, ইছা মিয়ার বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই চুরির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি দোকানে চুরির ঘটনায় যুবকদের হাতে ধরা পড়েন তিনি এবং মালামাল উদ্ধারের পর স্বীকারোক্তি দেন। পরে গ্রামবাসীর মতামতে লিখিত মুচলেকা রেখে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, পুলিশ এখনো এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পায়নি। কেউ থানায় জানায়নি। তবে কাউকে এভাবে ধরে এনে মারধর করা আইনবিরোধী এবং অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি সতর্ক করেন।
ঘটনাটি নিয়ে এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিচার করে ছেড়ে দেওয়া হলেও ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় প্রশাসনিক ও সামাজিক দিক থেকে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আচরণ এবং গ্রাম্য বিচারব্যবস্থার বৈধতা নিয়ে।