বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা অ্যাপল তাদের উৎপাদনের বড় অংশ চীন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। কোম্পানির সিইও টিম কুক ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৫ সালের জুন ত্রৈমাসিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোন তৈরি হবে ভারতে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান শুল্কযুদ্ধ। চীনে উৎপাদিত অ্যাপল পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এই অতিরিক্ত খরচ এড়াতেই অ্যাপল চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছে, আর সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ভারত ও ভিয়েতনাম।
২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় থেকে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে অ্যাপল বিকল্প বাজার খোঁজে। তখন থেকেই ফক্সকনের মাধ্যমে ভারতে আইফোন উৎপাদন শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে সেই উৎপাদন সক্ষমতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। এখন ভারতে তৈরি আইফোন শুধু দেশেই নয়, রপ্তানির জন্যও ব্যবহার করা হবে।
ভারত বর্তমানে অ্যাপলের জন্য শুধু একটি উৎপাদন কেন্দ্র নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারও। এখানকার মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, ফলে আইফোনের চাহিদাও বাড়ছে। ভারতে উৎপাদনের ফলে অ্যাপল এখানে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম রাখতে পারবে, যা স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
অ্যাপল শুধু আইফোন নয়, তাদের অন্যান্য জনপ্রিয় পণ্য যেমন আইপ্যাড, ম্যাকবুক, অ্যাপল ওয়াচ ও এয়ারপডের উৎপাদনের জন্য ভিয়েতনামকে বেছে নিয়েছে। এটি সরবরাহ চেইনকে বৈচিত্র্যময় ও স্থিতিশীল করবে।
টিম কুক আরও জানান, চলতি জুন ত্রৈমাসিকে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পণ্য যাবে, তার অনেকগুলোতেই ২০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যেতে পারে প্রায় ৯০ কোটি ডলার পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে ভারতের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ আপাতত ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত থাকায় অ্যাপল ভারত থেকে রপ্তানিতে জোর দিচ্ছে।
শুধু পরিকল্পনা নয়, অ্যাপল ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে মাত্র তিন দিনে তারা পাঁচটি বোয়িং কার্গো বিমানে ভারত থেকে আইফোনসহ অন্যান্য পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক এড়াতে তারা এই পদক্ষেপ নেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্কের কারণে চীনে তৈরি একটি আইফোনের দাম উঠতে পারে প্রায় আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত। সেই তুলনায় ভারতে উৎপাদিত আইফোনের দাম অনেক কম থাকবে। তাই অ্যাপলের পক্ষ থেকে ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়া একেবারেই যৌক্তিক।
সব মিলিয়ে এটা বলা যায়, অ্যাপলের জন্য ভারত হতে যাচ্ছে একটি গ্লোবাল প্রোডাকশন পাওয়ারহাউস। শুধু অ্যাপল নয়, আরও অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি চীন ছেড়ে বিকল্প খুঁজছে। সেই প্রতিযোগিতায় ভারত অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এতে ভারতের জন্য যেমন তৈরি হচ্ছে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ, তেমনি বাড়ছে বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনাও।
চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে অ্যাপল এখন যেভাবে ভারত ও ভিয়েতনামকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাতে বিশ্ব প্রযুক্তি উৎপাদনের মানচিত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে।