চাকরি ছেড়ে খামারে ঝুঁকলেন ওসমান, বছরে আয় করছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা

News Desk

চাকরি ছেড়ে খামারে ঝুঁকলেন ওসমান, বছরে আয় করছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা. Dhakainlight.com

প্রকৌশলীর চাকরি ছেড়ে ফিরে এসেছেন নিজ গ্রামে। শুরু করেছিলেন মাত্র কয়েকটি ছাগল দিয়ে খামারি জীবন। এখন তাঁর খামারে রয়েছে উন্নত জাতের গরু, কেঁচো সার উৎপাদনের শতাধিক চেম্বার, সবজি ক্ষেত, দুধ ও মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা। আর এই সবকিছু মিলিয়ে খরচ বাদে বছরে আয় করছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা।

ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ছোট আলগী গ্রামের বাসিন্দা মো. ওসমান গনী বর্তমানে একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি গড়ে তুলেছেন ‘ঐকতান অ্যাগ্রো’ নামের একটি সমন্বিত খামার। তাঁর খামারে উৎপাদিত কেঁচো সার, দুধ ও মাংসের চাহিদা শুধু ভোলায় নয়, আশপাশের জেলা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।

২০১৯ সালে চাকরি ছাড়ার পর তিনি পারিবারিক ১ একর ৩০ শতাংশ জমিতে ১০টি ছাগল দিয়ে খামার শুরু করেন। পরে বেসরকারি একটি সংস্থার সহায়তায় গরুর খামার ও কেঁচো সার উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন। বর্তমানে তাঁর খামারে ৪টি দুধেল গরু, ১৫টি মাংস উৎপাদনের গরু, ছাগল, কবুতর এবং ৭০টি কেঁচো সারের চেম্বার রয়েছে। খামারের পাশে সবজি, বেগুন ও লেবুর আবাদও করছেন।

২০২১ সালে কেঁচো সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি মাত্র দুটি চেম্বার দিয়ে কাজ শুরু করেন। এখন তাঁর মাসিক উৎপাদন ৬ মেট্রিক টন, পাশাপাশি আরও ১০টি চুক্তিভিত্তিক খামার থেকে মাসে ৫ মেট্রিক টন সার সংগ্রহ করেন। সারগুলো তিনি ১ থেকে ৫০ কেজির প্যাকেট করে বাজারজাত করেন। পাইকারি বিক্রয়মূল্য প্রতি কেজি ১৩-১৫ টাকা এবং খুচরায় ২০ টাকা। কেঁচো সার বিক্রি করে প্রতি মাসে তাঁর আয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া, তাঁর গরু থেকে প্রতিদিন ৭৫ কেজির মতো দুধ পাওয়া যায়, যা বিক্রি করে মাসে আয় হয় আরও ৬০-৭০ হাজার টাকা। মাংস বিক্রি নিয়েও রয়েছে তাঁর আলাদা পরিকল্পনা। ভোলা শহরে তাঁর একটি মাংস বিক্রির দোকান রয়েছে, যেখানে মানসম্মত মাংস বিক্রির জন্য রয়েছে আলাদা সুনাম। গরু কেনার পর তিনি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে রোগমুক্ত নিশ্চিত করেই জবাই করে মাংস বিক্রি করেন।

প্রতিদিনের খরচের মধ্যে রয়েছে তিনজন স্থায়ী শ্রমিকের ৫০ হাজার টাকা বেতন এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য আরও প্রায় ৮২ হাজার টাকা খরচ। সব খরচ বাদে কেঁচো সার ও দুধ বিক্রি থেকে মাসে তাঁর আয় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর মাংস বিক্রির বার্ষিক আয় যোগ করে বছর শেষে তাঁর মোট আয় দাঁড়ায় প্রায় ২০ লাখ টাকায়।

ভবিষ্যতে খামারের সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি দুধের গরুর সংখ্যা ৫টি বাড়াতে এবং আরও ৫০টি কেঁচো সারের চেম্বার স্থাপন করতে চান। একইসঙ্গে তিনি একটি আধুনিক মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট নির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন।

ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, “ওসমান গনী একজন প্রকৌশলী হয়েও সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর উৎপাদিত কেঁচো সার বিএসটিআই এবং মৃত্তিকা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রতিটি প্রদর্শনীতে তাঁর সারের নমুনা পাঠাচ্ছে।”

চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়া ওসমান গনীর এই সাফল্য এখন অনেক তরুণের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। জৈব পদ্ধতিতে কৃষি, বিজ্ঞানভিত্তিক খামারি এবং পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে তাঁর দৃষ্টান্ত দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

Leave a Comment

Footer Section