গাবতলী হাটের ইজারায় স্বেচ্ছাচারিতা, ডিএনসিসির ক্ষতি সাড়ে ৫ কোটি টাকা

News Desk

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একমাত্র স্থায়ী কোরবানির পশুর হাট গাবতলীর ইজারায় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি পড়েছে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে। প্রথম দফায় সর্বোচ্চ ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকার দরদাতা থাকলেও ‘প্রক্রিয়াগত ভুল’ দেখিয়ে ইজারা না দিয়ে খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএনসিসি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফার টেন্ডারে সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে ১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকায় হাট ইজারা দেওয়া হয়।

এই সিদ্ধান্তের ফলে ডিএনসিসির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যদিও খাস আদায়ে ৯৮ লাখ টাকা আয় হয়, তা যোগ করেও ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বেশি।

এর পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ের দিক থেকেও হয়েছে ক্ষতি। প্রথম দফার ২২ কোটি টাকায় ইজারা হলে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ সরকার পেত ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় সরকার পাচ্ছে মাত্র ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা—যা প্রায় ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা কম।

ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রক্রিয়া বাতিল করে খাস আদায়ের মাধ্যমে ‘পছন্দের ব্যক্তি’কে সুবিধা দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই ব্যক্তি হলেন বিএনপি নেতা এস এ সিদ্দিক ওরফে সাজু, যিনি শেষ পর্যন্ত এরফান ট্রেডার্স নামে ১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার দর দিয়ে ইজারা পান।

অন্যদিকে, সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা দর দেওয়া টিএইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক আলী হায়দার প্রথমে আগ্রহ দেখালেও পরে লিখিতভাবে ইজারা নিতে অপারগতা জানান। তবে অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দিয়ে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়।

প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ দাবি করেন, তিনি একা নন, টিমের পরামর্শে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খাস আদায়ে বেশি আয় করার পরিকল্পনা থাকলেও ঈদের সময় সে ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয় বলে কর্মকর্তারা লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

তবে এই আর্থিক ক্ষতির ঘটনায় কোনো কর্মকর্তা বা নীতিনির্ধারক প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। ডিএনসিসির কর্মকর্তারা এটিকে স্বচ্ছতার ঘাটতি ও দায়িত্বহীনতার উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার নীতি লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রের অর্থের ক্ষতি করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। সিটি করপোরেশনের ভেতরে কতটুকু যোগসাজশ হয়েছে, তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এমন অনিয়ম হতাশাজনক এবং সরকারের ভাবমূর্তির জন্য বিব্রতকর।

গাবতলী হাট ইজারায় এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম ভবিষ্যতে রোধে কার্যকর পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে নানা মহল থেকে। জনগণ প্রত্যাশা করে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সঠিক তদন্ত ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে সরকার।

Footer Section