গাজীপুর মহানগরীর মাস্টারবাড়ি এলাকায় বাসচালকের সহকারীর ধাক্কায় কলেজশিক্ষার্থী সিয়াম নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনতা ও শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়। এতে মহাসড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
নিহত সিয়াম (১৯) গাজীপুর সদর উপজেলার বাউপাড়া এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি রোভার স্কাউট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মাস্টারবাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভাড়া নিয়ে বাসচালকের সহকারীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাক্কা খেয়ে সড়কে পড়ে যান সিয়াম। তখন পাশ থেকে আসা অন্য একটি বাস তাঁকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
আজকের বিক্ষোভে সিয়ামের সহপাঠী এবং স্থানীয় লোকজন অংশ নেন। তাঁরা বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামেন এবং ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন। তারা তাকওয়া পরিবহনের একটি মিনিবাস ভাঙচুর করে এবং দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন। তাঁদের মতে, শুধু বিচার নয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতেই হবে।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, সিয়ামের মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি গণপরিবহন ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনার ফলাফল। তাঁদের দাবি, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, বাসচালক ও সহকারীদের বেপরোয়া আচরণ এবং যাত্রী নিরাপত্তার ঘাটতি আজকের এই নির্মম মৃত্যুর জন্য দায়ী। তারা আরও বলেন, এটি একটি উদাহরণ মাত্র—প্রতিদিনই এই রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, কিন্তু কেউই কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, “আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে আমরা শান্তভাবে বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে এনেছি। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে, তবে যানজটের প্রভাব এখনো রয়েছে।”
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ কিছুটা শান্ত হয়। পুলিশের আশ্বাস এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে বিক্ষোভকারীরা সড়ক ছেড়ে দিলে যানবাহন চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে দীর্ঘ সময় সড়ক অবরোধ থাকায় তীব্র যানজটের মুখে পড়ে যাত্রীরা।
এই ঘটনায় সিয়ামের পরিবার শোকাহত। তার মা-বাবা এবং আত্মীয়স্বজন বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
গাজীপুরে শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে জনমনে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা দেখিয়ে দেয়—এই সমাজে নিরাপদ সড়ক এখনো অধরা। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই রাস্তায় নামতে হয় নিরাপত্তার অভাবে। গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং কঠোর নজরদারি ছাড়া এই সমস্যার সমাধান আসবে না।
Dhakainlight-এ আমরা জানাচ্ছি, প্রশাসনের দায়িত্বশীল অবস্থান ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত না হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ও জনরোষ বারবার ফিরে আসবে।