কুলিয়ারচরে ব্যাংকে কর্মচারী অচেতন হওয়ার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ল গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত

News Desk

কুলিয়ারচরে ব্যাংকে কর্মচারী অচেতন হওয়ার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ল গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত. Dhakainlight.com

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকের একটি উপশাখায় একসঙ্গে ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে, আর আজ সোমবার সকালে পুলিশ ফুটেজটি সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দুপুর একটার কিছু আগে কয়েকজন গ্রাহক ব্যাংকে প্রবেশ করে লেনদেন সেরে বেরিয়ে যান। এরপর ব্যাংকটি একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। ঠিক সেই সময় ব্যাংকের হিসাব বিভাগের কর্মী হোসনা রহমান হঠাৎ হেলে পড়ে যান এবং বমি করতে থাকেন। এরপর একে একে আরও পাঁচজন কর্মী হেলে পড়েন, যাঁদের মধ্যে দুজন নারীও ছিলেন। কেউ কেউ বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খানসহ দুজন চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারেননি। তাঁদেরও বমি করতে দেখা যায়।

ফুটেজে আরও দেখা যায়, নিরাপত্তাকর্মী কামাল হোসেন তুলনামূলকভাবে সচেতন অবস্থায় ছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে ক্যাশ কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গিয়ে টেলিফোন ধরার চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি। টেলিফোন ধরতে গিয়ে কাচ ভেঙে ফেলেন। ঠিক সেই সময় এক গ্রাহক ব্যাংকে প্রবেশ করলে তিনি কথা বলার চেষ্টা করেন। এরপর ভবনের আরেক নিরাপত্তাকর্মী জুয়েল মিয়া এসে সহায়তায় এগিয়ে আসেন এবং একে একে অসুস্থদের বাইরে বের করে আনেন।

ঘটনার পর থেকে এই সিসিটিভি ফুটেজকে পুলিশ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করছে। ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব এবং কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন ফুটেজ বিশ্লেষণের কথা নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, ঘটনাটি কোনো ধরনের নাশকতা বা ডাকাতি নয়। ব্যাংকের টাকা-পয়সা, ভল্ট ও ক্যাশবাক্স সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে।

তদন্তের কেন্দ্রে রয়েছে ব্যাংকের জেনারেটর। নিয়ম অনুযায়ী এটি বাইরে থাকার কথা থাকলেও সেটি রাখা ছিল একটি বন্ধ কক্ষে। ঘটনার দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরটি চার ঘণ্টা ধরে চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এখান থেকেই বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে থাকতে পারে।

ওসি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ব্যাংকের কর্মীরা এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন এবং তাঁদের সঙ্গে কথাও বলা গেছে। সিআইডির ক্রাইম টিম ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে খাবার, পানি, চা ও বমির নমুনা সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে সঠিক কারণ।

ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খান জানান, ঘটনার আগে তিনি কিছু খাননি এবং কারও স্প্রে করার দৃশ্যও চোখে পড়েনি। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ মাথা ঘুরছিল, এরপর কিছুই মনে নেই।’’

ঘটনার পরপরই ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বাজিতপুর শাখা থেকে কর্মকর্তারা এসে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেন। তবে আজ সোমবার থেকে বিকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে ব্যাংক পুনরায় চালু করা হয়েছে।

ব্যাংকটির অবস্থান কুলিয়ারচর থানার হাবিব কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায়। এটি তিন বছর ধরে বাজিতপুর শাখার অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে।

পুলিশ, সিআইডি ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছে। খাবারে চেতনানাশক ছিল কি না, গ্যাস নিঃসরণের ধরন কী—এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, খুব দ্রুত প্রকৃত কারণ উদঘাটন সম্ভব হবে।

Footer Section