কাশ্মীরে সেনা অভিযানে আতঙ্কের ছায়া: ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় বাহিনী

News Desk

কাশ্মীরে সেনা অভিযানে আতঙ্কের ছায়া: ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় বাহিনী

কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী যে ধরপাকড় ও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে, তা ঘিরে পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়, আতঙ্ক ও তীব্র ক্ষোভ।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারতীয় সরকার কাশ্মীরজুড়ে কড়া অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় ২,০০০ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই।

রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি ও স্বপ্ন

সন্দেহভাজনদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হচ্ছে রাতে, যখন অধিকাংশ বাসিন্দাই ঘুমিয়ে থাকে। পলাতক এক সন্দেহভাজন আসিফ শেখের বোন ইয়াসমিনা বলেন, “আমার ভাই যদি দোষী হয়েও থাকে, তাহলে আমাদের পরিবারের কী দোষ? এই বাড়ি শুধু ওর নয়, আমাদের সবার।”

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই ধরণের পদক্ষেপ কেবল সম্পত্তি ধ্বংস নয়, বরং একটি জনগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টার শামিল। অনেক শিশু স্কুলে যেতে পারছে না, পরিবারগুলো রাতে ঘুমাতে পারছে না, ভবিষ্যৎ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

পাকিস্তানকে দায়, চুক্তি স্থগিত

ভারত সরকার এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। প্রমাণ ছাড়াই দায় চাপানোর অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলেও। এর জেরে দিল্লি সরকার ঐতিহাসিক সিন্দু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের এক কূটনৈতিক সমঝোতা ছিল।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: কাশ্মীরিদের সম্মিলিত শাস্তি দেওয়া হচ্ছে

কাশ্মীরের ফেডারেল সংসদ সদস্য আগা রুহুল্লাহ এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেন, “এই প্রতিক্রিয়া কেবল হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো কাশ্মীরিদের সম্মিলিত শাস্তি। এতে করে স্থিতিশীলতা ও শান্তির পথ আরও কঠিন হয়ে উঠছে।”

মানবাধিকারের লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ

পুলিশ বলছে, এটি ‘তথ্য সংগ্রহমূলক’ জিজ্ঞাসাবাদ হলেও, অনেককে আটক করে দিনের পর দিন পরিবারের কাউকে না জানিয়ে আটক রাখার ঘটনাও ঘটছে। অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এটি স্পষ্টভাবে আইনি ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

সীমান্তে শঙ্কা: “যুদ্ধ হলে উভয় পক্ষই ধ্বংস হবে”

কাশ্মীর সীমান্তবর্তী ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। দাওকে গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী হারদেব সিং বলেন, “যুদ্ধ হলে দু’পক্ষই ধ্বংস হবে। এখন প্রয়োজন শান্তি ও সংলাপে ফেরা।”

Leave a Comment

Footer Section