কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে শিক্ষক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধে দুর্ভোগ

News Desk

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে শিক্ষক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধে দুর্ভোগ. Dhakainlight.com

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে কর্মরত শিখন স্কুলের ছাঁটাই হওয়া স্থানীয় শিক্ষকরা চাকরি ফেরতের দাবিতে আজ সকাল সাতটা থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের কোর্টবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা চলা এই অবরোধে উভয়পথে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে, সাধারণ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্পে অর্থসংকটের অজুহাতে ১ হাজার ২৫০ জন স্থানীয় (বাংলাদেশি) শিক্ষককে বিনা নোটিশে ছাঁটাই করা হয়েছে, অথচ বহিরাগত ও রোহিঙ্গা শিক্ষকরা বহাল রয়েছেন। এই বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষকরা কোর্টবাজারে সড়ক দখলে নেন। ফলে এনজিও কর্মীরা শিবিরে প্রবেশ করতে পারেননি। যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে কক্সবাজার-টেকনাফসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে।

পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় কয়েকটি এনজিওর গাড়ি শিবিরে প্রবেশের চেষ্টা করলেও আন্দোলনকারী শিক্ষকরা তাদের বাধা দেন এবং ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে ফেরত পাঠান। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘটনাস্থলে যান উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী, উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ হোসেন এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী।

শিক্ষকেরা তাঁদের দাবি স্পষ্টভাবে জানান—যদি অর্থসংকটে প্রকল্প চালানো না যায়, তবে রোহিঙ্গা শিবিরের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় ছাঁটাই হওয়া স্থানীয় শিক্ষকদের চাকরি ফেরাতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আন্দোলনকারীদের দাবি, রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় তহবিল সংকট দেখিয়ে স্থানীয়দের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হলেও রোহিঙ্গা ও জেলা বাইরের শিক্ষকরা বহাল আছেন, যা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন, চাকরি ফেরতের নিশ্চয়তা না এলে ভবিষ্যতে এনজিও যানবাহন শিবিরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইউনিসেফ ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চালানোর অর্থ থাকার কথা জানিয়েছে। এরপর প্রকল্প স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এই পরিস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও তহবিলের অভাবেই চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক বছর প্রকল্প পরিচালনার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৬০-৮০ কোটি টাকা। সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় এই অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

এই আন্দোলন কেবল একটি চাকরি ফেরতের ইস্যু নয়, বরং স্থানীয় অধিকার, মানবিকতা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার বৃহত্তর প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। আপাতত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে, এবং এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে।

Footer Section