‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ কি নতুন দলের স্লোগান,

admin2

কমিটির আকার বাড়বে, লক্ষ্য তৃণমূলে বিস্তৃতি, Dhakainlight.com

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের মুখে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এই স্লোগান অনেক নেতা ব্যবহার করায় কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে, স্লোগানটি দলীয় স্লোগান কিনা।

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতা বক্তব্যের ইতি টেনেছেন ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটি দিয়ে।

দল গঠনের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের অনেকে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি ব্যবহার করতেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে একই স্লোগান অনেক নেতা ব্যবহার করায় কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে স্লোগানটি কি জাতীয় নাগরিক পার্টি দলীয় স্লোগান হিসেবে গ্রহণ করেছে।

সে প্রশ্নের উত্তরের আগে জেনে নেওয়া যাক, ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি কোথা থেকে এল।

প্রখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের এক লেখায় উঠে এসেছে এ স্লোগানের আদ্যোপান্ত। ২০২২ সালের ২৯ মে ভারতীয় পত্রিকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এক লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৯২১ সালে মাওলানা হাসরাত মোহানি (১৮৭৫-১৯৫১) প্রথম স্লোগানটি ব্যবহার করেন। এরপরে এ স্লোগান ঠাঁই করে নেয় উপনিবেশবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের নেতা ভগত সিংয়ের কণ্ঠেও।

নানা পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন হাসরাত মোহানি। উর্দু ভাষার এ কবি ছিলেন শ্রমিকনেতা, ছিলেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও।

হাসরাত মোহানি ভারতের উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলার মোহন নামের একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ইরফান হাবিব লিখেছেন, জন্মের পর হাসরাত মোহানির নাম রাখা হয় ফজলুল হাসান। এ নামেই তিনি বেড়ে ওঠেন। একজন বিপ্লবী উর্দু কবি হিসেবে ‘হাসরাত’ ছিল তাঁর কলমি নাম, যা একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তাঁকে পরিচিতি দিয়েছিল। তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির এক নেতার সঙ্গে প্রথম ভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজ বা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেছিলেন।

ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর হাসরাত মোহানি গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ভারতীয় সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে দিয়েছিলেন হাসরাত মোহানি।

ইরফান হাবিবের লেখায় দেখা যাচ্ছে ১৯২৯ সালে আদালতে দেওয়া এক জবানবন্দিতে ভগত সিং বলেন, ’ ইনকিলাব বা বিপ্লব বোমা বা পিস্তলের সংস্কৃতি নয়। আমাদের বিপ্লবের অর্থ হলো প্রকাশ্য অন্যায়ের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকা বর্তমান পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ বদলে দেওয়া।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক জাফর আহমেদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে জানান, ইনকিলাব আরবি শব্দ। জিন্দাবাদ উর্দু শব্দ। মানে হলো ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি আরবি ও উর্দুর মিশেল। তিনি বলেন, জিন্দাবাদ মানে অভিনন্দন জানানো। ফলে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানের মানে হলো বিপ্লবকে অভিনন্দন জানানো।

অবশ্য ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব তাঁর লেখায় ইনকিলাব জিন্দাবাদের অর্থ হিসেবে লিখেছেন, ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’।

দেশে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গত জুলাইয়ে যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে, তখন তরুণদের অনেকেই ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি ব্যবহার করেন।

জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি জাতীয় নাগরিক পার্টির দলীয় স্লোগান নয়। যেহেতু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি বেশ আলোচিত ছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এখনো আমরা এই স্লোগানটি বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যবহার করছি।’

’আমাদের দলীয় স্লোগান ও মূলনীতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আপাতত আত্মপ্রকাশ, কমিটি প্রকাশ আর ঘোষণাপত্র হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো সামনে চূড়ান্ত করা হবে’, বলেন তিনি।

Leave a Comment

Footer Section