অযত্ন-অবহেলাতেও টিকে আছে ভোলার হাজার কোটি টাকার ডাবের অর্থনীতি

News Desk

অযত্ন-অবহেলাতেও টিকে আছে ভোলার হাজার কোটি টাকার ডাবের অর্থনীতি. Dhakainlight.com

ভোলায় নারকেল ও ডাবের চাষ এক সময় ছিল বাড়ির শোভা ও স্বাদবর্ধক পানীয়ের উৎস। তবে এখন এটি রীতিমতো একটি অর্থনৈতিক খাত। জেলার ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ নারকেলগাছ বছরে উৎপাদন করছে ১১০ কোটির বেশি ডাব ও নারকেল। যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১১ হাজার ৬৫ কোটি টাকা।

তবে এই বিশাল অর্থনীতির পেছনে নেই তেমন কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারকেলগাছের কোনো যত্ন নেওয়া হয় না, ফলে রোগবালাই, পোকামাকড়ের আক্রমণ, খরা, নদীভাঙন এবং অজ্ঞতা মিলিয়ে দিনে দিনে কমছে ফলন।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, কোনো গাছে ৭-৮টি ডাব ধরছে, কোথাও ১০০টির বেশি। আবার অনেক গাছে কিছুই ধরছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাতা শুকিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ ছত্রাক ও পোকার আক্রমণ। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, নারকেলগাছে বছরে অন্তত দুবার সঠিক সার প্রয়োগ এবং ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক স্প্রে করলে ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব।

চরফ্যাশনের চর কুকরি-মুকরির বাসিন্দা মো. নুরুল ইসলাম বছরে তিনবার একটি গাছ থেকে গড়ে ১৩০টি নারকেল বিক্রি করেন। তবে ভাঙনপীড়িত ঢালচরে যেখানে একসময় ছিল তিন হাজারের বেশি নারকেলগাছ, এখন রয়েছে মাত্র ৩০টি।

কিন্তু এত কষ্ট করে ফলন ফলিয়েও প্রাপ্য দাম পান না গাছের মালিকেরা। সদর রোডে একটি ডাব খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, অথচ গাছের মালিকেরা পাচ্ছেন মাত্র ৫০-৭০ টাকা। হকার ও খুচরা বিক্রেতারা মুনাফার বড় অংশ ভোগ করলেও চাষিরা থাকছেন বঞ্চিত।

ভোলায় নারকেল ও ডাবের জন্য গড়ে উঠেছে শতাধিক আড়ত। প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ ডাব জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ট্রাক বা লঞ্চে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। আড়তদারদের মতে, গ্রীষ্মকালে চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রি ভালো হয়, কিন্তু শীতে তা অনেকটাই কমে যায়।

বিসিক শিল্পনগরীর মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. জামাল উদ্দীন খান বলেন, ভোলায় এত নারকেল উৎপাদিত হলেও কোনো কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। একসময় ট্রলার ও লঞ্চভর্তি করে নারকেল ঢাকাসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় পাঠানো হতো, যেখানে তা থেকে তেল উৎপাদন হতো। বর্তমানে ডাব ও ঝুনা নারকেল ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে বাইরের জেলায়, ভোলার অর্থনীতি থেকে যুক্ত হচ্ছে না কোনো প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা নেই বলা সঠিক নয়, তবে সেটি অপ্রতুল। কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সচেতনতা এবং সরকারিভাবে পরিকল্পিত উদ্যোগ থাকলে নারকেলভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব এবং এতে কৃষক থেকে শুরু করে পুরো জেলার অর্থনীতি উপকৃত হবে।

ভোলার এই বিশাল সম্ভাবনাময় ডাব ও নারকেল অর্থনীতি যথাযথ পরিকল্পনা ও যত্ন পেলে দেশের অন্যতম কৃষিভিত্তিক শিল্পখাতে পরিণত হতে পারে, যা শুধু স্থানীয় নয়, জাতীয় পর্যায়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Footer Section