অবৈধ পাচার থেকে উদ্ধার, অবশেষে বনে ফিরল গরিলা—আত্মার পর্বতের ঐতিহাসিক রিহ্যাব অভিযান

News Desk

অবৈধ পাচার থেকে উদ্ধার, অবশেষে বনে ফিরল গরিলা—আত্মার পর্বতের ঐতিহাসিক রিহ্যাব অভিযান. Dhakainlight.com

গরিলাদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে কঙ্গোর বিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক। অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার থেকে উদ্ধার করা চারটি নারী গরিলা অবশেষে ফিরেছে বনের প্রকৃত আবাসে—এটি পূর্বাঞ্চলীয় লো-ল্যান্ড গরিলাদের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পুনঃস্থাপন বা ট্রান্সলোকেশন প্রক্রিয়া।

গরিলাগুলো শৈশবেই অবৈধ পাচারকারীদের হাতে পড়ে যায় এবং পরে পূর্ব কঙ্গোর কাসুহগো এলাকায় অবস্থিত ‘গরিলা রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড কনজারভেশন এডুকেশন সেন্টার’ (GRACE)-এ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বছরের পর বছর ধরে তাদের বুনো জীবনের জন্য প্রস্তুত করা হয়—খাদ্য খোঁজা, সামাজিকতা শেখা, আর প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে তোলা।

২০২৪ সালের অক্টোবরে তাদের হেলিকপ্টারে করে ৬৪ কিলোমিটার দূরে বিরুঙ্গার মাউন্ট চিয়াবেরিমু অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি ৫,৫৭৭ ফুট উঁচু একটি পর্বত, যেখানে ইতিমধ্যে আটটি বন্য গরিলা বাস করছিল। গবেষকদের মতে, এই ছোট গরিলা গোষ্ঠী যদি বাইরে থেকে নতুন সদস্য না পায়, তাহলে আগামী ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

গরিলাগুলোর নাম ছিল ইসাঙ্গি, লুলিনগু, মাপেন্দো এবং ন্ডজিনজালা—যাদের বয়স ১০ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। প্রত্যাশা ছিল কয়েক মাস বা বছর সময় লাগবে তাদের পরিবেশে খাপ খাওয়াতে, কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, মাত্র দুই মাসেই তারা প্রস্তুত হয়ে যায়।

এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এক বন্য রৌপ্য-প্রাপ্ত গরিলা ‘মোয়াসা’। প্রতিদিন সে এসে গরিলাদের ঘেরের বাইরে দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করত, মাটিতে আঘাত করে দৃষ্টি আকর্ষণ করত। গরিলারা তার ডাকের সাড়া দেয় এবং ঘেরের পাশে ঘুমাতেও শুরু করে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে গবেষক দল সিদ্ধান্ত নেয়, এটাই সময় তাদের মুক্ত করে দেওয়ার। ঘেরের গায়ে ছিদ্র করে দেওয়া হয় এবং চার নারী গরিলা নিজেরাই পায়ে হেঁটে বনের স্বাধীনতায় পা রাখে। এরপর তারা মোয়াসার নেতৃত্বাধীন বন্য গরিলা গোষ্ঠীতে দ্রুত মিশে যায় এবং স্থানীয় বাঁশের কুঁড়ি ও অন্যান্য গাছগাছড়ার খাদ্যাভ্যাসে মানিয়ে নেয়।

নতুন বছরের শুরুতেই সবচেয়ে বড় আনন্দের খবর আসে—গবেষকরা দেখতে পান মোয়াসা প্রথমবারের মতো ন্ডজিনজালার সঙ্গে মিলনে লিপ্ত হয়েছে। পরে আরও তিনটি নারী গরিলার সঙ্গে একই দৃশ্য দেখা যায়। গরিলাদের গর্ভকালীন সময় মানুষের মতো প্রায় ৯ মাস হওয়ায় গবেষকরা এখন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন সম্ভাব্য শাবক আগমনের আশায়।

যদিও এই পুনর্বাসন প্রচেষ্টা প্রাণী সংরক্ষণের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য, তবুও চ্যালেঞ্জ এখনও অনেক। বিরুঙ্গা পার্ক দীর্ঘদিন ধরেই সশস্ত্র সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু—১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০ জনেরও বেশি রেঞ্জার নিহত হয়েছেন। এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক সক্রিয়তায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

GRACE-এর কঙ্গো পরিচালক জ্যাকসন কাআবুয়ায়া এমবেকে বলেন, “এই এলাকায় কাজ করা সহজ নয়। তবে আমরা স্থানীয় জনগণকে কেন্দ্র করে কাজ করি। স্থানীয়রাই আমাদের কর্মী, আমাদের শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে। তাদের কাছে এটি গর্বের বিষয়।”

মানব জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বনভূমি ধ্বংস, জ্বালানি সংগ্রহ এবং খাদ্য সংকটে গরিলাদের হত্যা—এসব চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, গরিলা তাদের পরিচয়, তাদের টোটেম, তাদের গর্ব। একসময় তারা গরিলার শব্দে ঘুমাতেন—এখন তারা সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চান।

পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রকৃত চাবিকাঠি হলো বন সংরক্ষণ। কেবল গরিলাকে উদ্ধার করে ছেড়ে দেওয়া নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করলেই এই সাফল্য টেকসই হবে।

এই পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রকল্প এখন শুধু গরিলা নয়, সমগ্র সংরক্ষণ আন্দোলনের জন্য একটি আশার আলো হয়ে উঠেছে।

Footer Section