দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং সংস্কারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতির ঘাটতির মধ্যেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন? এই প্রশ্ন উঠে এসেছে নানা সূত্রে, বিশেষত তখন যখন দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় আশঙ্কাজনক শিরোনাম একের পর এক ছাপা হচ্ছে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাও আশার আলো দেখাতে পারছে না।
মাহমুদুর রহমান মান্না তাঁর বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছেন, সংস্কার ও নির্বাচনের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সীমিত যোগাযোগ অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তিনি বলেন, ইউনূস একজন অসাধারণ মানুষ হলেও তিনি রাজনীতির জটিল বাস্তবতা ও দর-কষাকষির খেলায় স্বস্তিবোধ করেন না।
একসময় ইউনূস নিজেই বলেছেন, ‘আমার কথা শুনতে হবে। না হলে আমি ফিরে চলে যাব।’ এ বক্তব্য থেকেই উঠে আসে অনেকে তাঁর পদত্যাগের ইঙ্গিত পাচ্ছেন কি না। পাশাপাশি একটি বাস্তব প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন মান্না—“আপনার মতো একজন নোবেলজয়ী কি এই দায়িত্ব ফেলে চলে যেতে পারেন?”
তিনি লিখেছেন, সরকার এখনো নির্বাচনের কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দেয়নি। ইউনূস ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের কথা বললেও উপদেষ্টা পরিষদের কেউ সেই সময়সীমার সঙ্গে একমত নন। এমনকি, সেনাবাহিনীর স্টাফপ্রধান জেনারেল ওয়াকার পর্যন্ত বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। এ অবস্থায় যখন সরকার স্পষ্ট কিছু বলছে না, তখন মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করছে—প্রধান উপদেষ্টা আদৌ নিজের অবস্থানে স্থির আছেন কি না?
অভ্যুত্থানোত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি এবং তরুণ নেতৃত্বের দল এনসিপি, উভয়ের সঙ্গেই দূরত্ব তৈরি হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। মাহমুদুর রহমান মান্নার মতে, ইউনূস রাজনীতিকে অপছন্দ করেন, সেটাই এই দায়িত্ব পালনে তাঁর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
তবে সবকিছুর পরেও লেখক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, এখনো বাংলাদেশের মানুষ ইউনূসকে ভালোবাসে। তাই তাঁর উচিত ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের একটি বাস্তব পরিকল্পনা তুলে ধরা, যতটুকু সংস্কার করা সম্ভব তা করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে খোলামেলা সংলাপে বসা।
লেখাটির শেষাংশে একটি স্পষ্ট আহ্বান জানিয়ে মান্না লিখেছেন—“স্যার, সময় আপনাকে ঐতিহাসিক এক দায়িত্ব দিয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই ন্যূনতম যা করা সম্ভব, তা করবেন। এ জন্যই তো আপনি নোবেল লরিয়েট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।”